এবার কোনো বিতর্ক ও ঝামেলা ছাড়াই পর্দা উঠেছে বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগের (বিপিএল) দশম আসরের। দেড়মাসের এই টুর্নামেন্টে চূড়ান্ত হাসি হেসেছে তামিম ইকবালের দল ফরচুন বরিশাল। বিপিএলের সবচেয়ে সফল দল কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সকে ৬ উইকেটে হারিয়ে বরিশালের ফ্র্যাঞ্চাইজিটি প্রথম শিরোপা ঘরে তুলেছে।
পুরো টুর্নামেন্টে কারা কেমন পারফর্ম করেছে, দেশের ক্রিকেটভক্তরা জানেন। এই আসর শেষে বিপিএলসেরা একাদশ করলে কারা থাকবেন সেখানে? চ্যাম্পিয়ন দল হিসেবে অধিনায়ক হিসেবে নিশ্চয়ই অনেকে সেই একাদশের নেতৃত্বে তামিমকে প্রাধান্য দেবেন!
তেমনই একটি একাদশ গঠন করেছে ক্রীড়াভিত্তিক ওয়েবসাইট ইএসপিএন ক্রিকইনফো। যেখানে তামিমকে অধিনায়ক করে তারা টুর্নামেন্টসেরা একাদশে রেখেছে সাবেক টাইগার অধিনায়ক সাকিব আল হাসানকেও। তবে সবমিলিয়ে বিপিএল চ্যাম্পিয়ন বরিশালেরই আধিপত্য দেখা যায় সেরা এগারোতে। পুরো একাদশটি দেখে নেওয়া যাক—
দুই তামিমকে ওপেনিংয়ে রেখে একাদশ সাজিয়েছে ক্রিকইনফো। যেখানে অধিনায়ক তামিমের সঙ্গে রয়েছেন চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্সের হয়ে খেলা তানজিদ হাসান তামিম। সদ্য সমাপ্ত আসরে সেরা রানসংগ্রাহক হয়েছেন তামিম ইকবাল। ১৫ ইনিংসে তিন ফিফটিতে তিনি টুর্নামেন্টের সর্বোচ্চ ৪৯২ রান করেন।
যেখানে তার গড় ৩৫.১৪ এবং স্ট্রাইক রেট ১২৭.১৩। সেরা ব্যাটারের তালিকায় ছিলেন তানজিদ তামিমও। চট্টগ্রামকে প্লে-অফে তুলতে ভূমিকা রাখা এই ওপেনারের রান ৩৮৪। যেখানে ৩২ গড় এবং ১৩৫.৬৮ স্ট্রাইকরেট নিয়ে তিনি ব্যাট করেছেন। রয়েছে একটি সেঞ্চুরিও। ওয়ানডাউনে রয়েছেন তাওহীদ হৃদয়।
তামিম ইকবালের সঙ্গে সেরা রানসংগ্রাহকের লড়াই চালানো এই ডানহাতি ব্যাটসম্যানের কুমিল্লার ফাইনালে ওঠায় ছিল অসামান্য অবদান। হৃদয় শেষ পর্যন্ত হয়েছেন দ্বিতীয় সেরা রানসংগ্রাহক। ৩৮.৫ গড় এবং ১৪৯.৫ স্ট্রাইকরেট নিয়ে তিনি ৪৬২ রান করেছেন। বিপিএলের এবারের আসরের দ্বিতীয় সেঞ্চুরি আসে তার ব্যাটে।
তাই তিন নম্বরে হৃদয়ই যোগ্য প্রার্থী! পাকিস্তানের সাবেক অধিনায়ক বাবর আজমও আছেন সেরা একাদশে। যদিও এনওসির মেয়াদ শেষ হওয়ায় তিনি মাত্র ছয় ম্যাচ খেলেই দেশে ফিরে যান। ছয় ম্যাচে দুটি ফিফটির পাশাপাশি দুটি ৪৭ রানের ইনিংসে সবমিলিয়ে তিনি ২৫১ রান করেন। বাবরের খেলা ছয় ম্যাচের পাঁচটিতেই জিতেছে রংপুর।
মিডল অর্ডারে টুর্নামেন্টজুড়ে দারুণ কার্যকরী ছিলেন রংপুর রাইডার্সের হয়ে খেলা জেমস নিশাম ও বরিশালের মুশফিকুর রহিম। দুজনেই আছেন সেরা একাদশে। নিউজিল্যান্ড অলরাউন্ডার নিশাম যদিও বিপিএলের মাঝামাঝিতে রংপুর শিবিরে যোগ দিয়েছিলেন। তিন ফিফটিতে তিনি রান করেছেন ২৯১।
যেখানে তার গড় ৭২.৭৫ এবং স্ট্রাইকরেট ছিল ১৬৭.২৪। একইসঙ্গে নিশাম চার উইকেটও শিকার করেছেন। অভিজ্ঞ টাইগার ব্যাটার মুশফিক এবার প্রথম কোনো বিপিএল শিরোপা জিতেছেন। প্রায় ৩২ গড় এবং ১২১ স্ট্রাইকরেটে ৩৮০ রান করেন এবং ১৭টি ক্যাচ ও দুটি স্টাম্পিং করেছেন মুশি।
বরিশালের চ্যাম্পিয়ন হওয়ার ম্যাচে সেরা খেলোয়াড় হয়েছিলেন ওয়েস্ট ইন্ডিজের অলরাউন্ডার কাইল মায়ার্স। তিনিও আছেন বিপিএলের সেরা একাদশে। এদিকে, সাকিব শুরুর দিকে চোখের সমস্যার কারণে বেশ কয়েক ম্যাচে ব্যাট না করলেও শেষদিকে তিনি সে অবস্থাতেই রান পেয়েছেন। ১৫৮.৩৮ স্ট্রাইকরেটে ২৫৫ রান এবং মাত্র ৬.৩১ ইকোনমিতে ১৭ উইকেট শিকার করেছেন তিনি।
সাকিব রংপুরকে নেতৃত্ব না দিলেও, তার ব্যক্তিগত পারফরম্যান্স এগিয়ে নিয়েছে রংপুরকে। অন্যদিকে, বরিশালের হয়ে মায়ার্স ৪০.৫০ গড় এবং প্রায় ১৫৮ স্ট্রাইকরেটে ২৪৩ রান করেছেন বিপিএলে। এছাড়া ৬–এর কম ইকোনমিতে ৯ উইকেটও নিয়েছেন এই ক্যারিবীয়। ইনজুরি থেকে ফিরেও দারুণ ফর্ম দেখিয়েছেন বরিশালের অলরাউন্ডার সাইফউদ্দিন। যা তাকে সেরা একাদশে জায়গা করে দিয়েছে।
ব্যাট হাতে সেভাবে অবদান রাখতে না পারলেও, সাতের কম ইকোনমিতে তরুণ এই অলরাউন্ডার ১৫ উইকেট শিকার করেছেন। বিপিএলে সেরা একাদশে জায়গা পেয়েছেন ওমানের বাঁ-হাতি পেসার বিলাল খান ও টাইগারদের তারকা পেসার শরিফুল ইসলাম। শরিফুল এবারের বিপিএলের সেরা উইকেটশিকারি হয়েছেন। ১২ ম্যাচেই তার দখলে গেছে ২২ উইকেট। এছাড়া চট্টগ্রামের হয়ে ১৫ উইকেট নিয়েছেন বিলাল।